হামাগুড়িরাজর্ষি চক্রবর্তী (উচ্চমাধ্যমিক ২০০৪)[কবি শঙ্খ ঘোষের হামাগুড়ি কবিতা অবলম্বনে]
(মঞ্চ অন্ধকার। হঠাৎ একটা জোনে আলো জ্বলে ওঠে। দেখা যায় একটি ছেলে আর মেয়ে, আলাপ চারিতায় মগ্ন।)মেয়েঃ পাটায়া। ব্যস্ পাটায়াই ফাইনাল।ছেলেঃ আরে ডার্লিং, আপাতত দীঘাটা চলো। পরে পাটায়া যাওয়া যাবে।মেয়েঃ না না না, আমি ওসব জানি না। বিয়ের পর প্রথম হানিমুন নাকি দীঘা! জাস্ট ওয়াক্। ওসব যায়গায় ভদ্রলোকে যায়?ছেলেঃ আমার ব্যাপার টা তো একটু বোঝার চেষ্টা করো। এই তো মায়ের অপারেশনে এতো খরচ হলো। তারপর বোনের বিয়ে গেলো। পরের মাসে আমাদের বিয়ে। তুমি তো জানোই আমার রোজগার কতটুকু। বাবা চলে যাওয়া থেকে এই পাঁচ বছরে প্রায় নিঃস্ব।মেয়েঃ বিয়ের করার মুরোদ নেই এদিকে প্রেম করার সখ তো কম নয়। নেহাৎ সবাই জেনে গেছে, ড্যাডির সম্মানটা তো আর নষ্ট হতে দিতে পারি না। আই অ্যাম টোটালি ট্রাপড, নাহলে কবেই..........ছেলেঃ 'নাহলে কবেই' কি? থামলে কেন? বলো?মেয়েঃ ছাড়ো! বাদ দাও! আমার আর ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যাবো।(মেয়েটি বেরতে যায়, ছেলেটা ওর হাতটা ধরে সজল চোখে, কাতর কন্ঠে বলে)ছেলেঃ আমি তোমায় ভালোবাসি।মেয়েঃ (ব্যঙ্গ করে) এতো ন্যাকামি মেরো নাতো। ডিসগাস্টিং।ছেলেঃ অনেক, অনেক স্বপ্ন দেখেছি যে তোমায় নিয়ে। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না আমি।মেয়েঃ আমায় বিয়ে করতে গেলে, পাটায়া নিয়ে যেতেই হবে। বলো পারবে?ছেলেঃ ঠিক আছে তাই হবে। যেখান থেকে পারি আমি টাকা জোগাড় করবো। তবু তুমি আমায় ছেড়ে যেও না।(আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। ওরা ফ্রিজ হয় এবং মঞ্চের অন্য একটি জোন আলোকিত হয়। দেখা যায় রাজনৈতিক দলের জনৈক নেতা অপেক্ষারত আর জনৈক পুলিশের প্রবেশ।)পুলিশঃ (দু হাত জোড় করে, বিগলিতভাবে) হেঃ হেঃ হেঃ স্যর, আপনি আমাকে ডেকেছেন স্যর?নেতাঃ হ্যাঁ, তা কেমন আছ দারোগাবাবু(শ্লেষ ভরে)?পুলিশঃ আজ্ঞে স্যর, আপনি আমাদের ভগবান। আপনার দয়ায় খেয়ে পরে স্বর্গসুখে আছি স্যর।নেতাঃ কিন্তু, আমার 'স্বর্গসুখটা' তোমার কোন বাড়া ভাতে ছাই ঢাললো দারোগা?পুলিশঃ আজ্ঞে, মানেটা ঠিক বুঝলাম না স্যর?নেতাঃ তোমার মেয়ে তো একটা দৈনিক পত্রিকায় চাকরি করে। রিসেন্টলি প্রমোশনও পেয়েছে শুনলাম।পুলিশঃ হেঃ হেঃ হেঃ আজ্ঞে স্যর, (নেতা কে দেখিয়ে) সবই তো ভগবানের আশীর্বাদ।নেতাঃ (ঝাঁঝিয়ে) এত ভগবান ভগবান করো না তো। (পুলিশ জিভ কাটে) বাপ্ শালা ভগবান মারাচ্ছে আর মেয়ে পেছনে হুড়কো গুঁজছে।পুলিশঃ কেন স্যর ও কি করেছে?নেতাঃ (পুলিশের কলার চেপে ধরে) কেন ন্যাকামি মারাচ্ছো দারোগা? পটলার নাম আজকের পত্রিকার ফ্রন্ট পেজে এলো কি করে? (কলার ছেড়ে দিয়ে) হ্যাঁ পটলার সুরসুরি একটু বেশি, একটু আধটু মাগিবাজিও করে ঠিকই। তাই বলে ফ্রন্ট পেজে?পুলিশঃ (চমকে গিয়ে) বুঝতে পেরেছি, পটলা আর ঐ বেবুশ্যে মাগিটার কেসটা তো? ঐ খবরটা ও কভার করেছে!নেতাঃ (রেগে গিয়ে) না তো কি আমি ইয়ারকি মারছি? খবরের শুরুতেই রিপোর্টারের নামটা দেখে চমকে উঠেছিলাম। বেশ্যাও নাকি আবার ধর্ষিতা! শালা তোমরা আমারই খাবে, আমারই পড়বে, আবার আমারই পোঁদে বাঁশ দেবে?পুলিশঃ না স্যর। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি বাড়ি যাই, আজ ওর একদিন কি আমার একদিন!নেতাঃ হ্যাঁ, সেই ভালো। আর তাতেও যদি কাজ না হয় দারোগা তো, তোমার মেয়েকে বলে দিও,পটলা কিন্তু এবার সুরসুরিটা ওকেই দেবে(ক্রুর হাসি)।পুলিশঃ হেঃ হেঃ হেঃ তা আর বলতে!(আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। নেতা ও পুলিশ ফ্রিজ হয়। এবার মঞ্চের আরেকটি জোন আলোকিত হয়। দেখা যায় তিন কলেজ পড়ুয়া। প্রথম জন ও তৃতীয় জন ছেলে আর দ্বিতীয় জন মেয়ে।)প্রঃ বাই দ্য ওয়ে, কি খাওয়াচ্ছিস্ আগে না জেনে কিন্তু খবরটা দিতে পারবো না।দ্বিঃ এত ফুটেজ খাচ্ছিস কেন? আগে খবর টা তো বল?তৃঃ সত্যি মাইরি, তখন থেকে কি এতো ধানাই-পানাই করছিস! বলবি তো বল, নইলে চললাম।প্রঃ তৃতীয়র থুতনি ধরে এত তাড়া কিসের খোকা? রুমকি ওয়েট করছে বুঝি?তৃঃ ধোর শালা, তোরা মারা, আমি চললাম।প্রঃ (তৃতীয়ের হাতটা ধরে আটকায়) দাঁড়া দাঁড়া বলছি। কাল তো আমাদের পরীক্ষা?দ্বিঃ হ্যাঁ, তো?প্রঃ ইকোনমিক্স।তৃঃ হ্যাঁ, তো তাতে কি?প্রঃ আচ্ছা তোদের প্রিপেরাসন কেমন?দ্বিঃ তুই এটা বলার জন্য ডেকেছিস?প্রঃ আরে না না। আগে উত্তরটা দে বলছি।তৃঃ আমি গ্যারান্টি দিয়ে ফেল মারবো।প্রঃ সে অত রুমকি রুমকি করলে, ফেলটাই স্বাভাবিক।দ্বিঃ নারে, আমিও এবার নির্ঘাৎ ফেল করবো।প্রঃ সারাদিন অত প্রেমিকদের পকেট কেটে ঘুরে বেড়ালে ঐ হবে।তৃঃ (প্রথমকে) এমন ভাব করছিস যেন তুই এবার ফার্স্টক্লাস মারবি?প্রঃ না না ব্যাপারটা তা না। ফেল তো অবধারিত করবো। আর এবার ফেল মারলে বাপি ঘর থেকে বার করে দেবে। তাই এবার এই ব্যবস্থা। (বলেই মোবাইল ফোন বার করে ছবি দেখায়। বাকি দুই বন্ধু ঝুঁকে পরে দেখে এবং খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে।)দ্বিঃ জিও মামা।তৃঃ পাগল করে দে মা, লুটে পুটে খাই। আমার তরফ থেকে ট্রিপল এক্স রাম। (হাতের ইশারায় 750এম এল বোঝায়)দ্বিঃ আর আমার তরফ থেকে এক ছিলিম বাবার প্রসাদ। কিন্তু কোয়েশ্চন পেপারের ছবি পেলি কোথায়?তৃঃ হ্যাঁ হ্যাঁ পেলি কোথায় বল?প্রঃ আম খাও না বাল। তোমাদের আঁটি গুনে লাভ আছে।দ্বিঃ এবার তাহলে ইকোনমিক্সটায় অ্যাট লিস্ট কেউ আটকাতে পারছে না!প্র ও দ্বিঃ (কোরাসে) একদম একদম।(আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। তবে এরা ফ্রিজ না হয়ে মাইম করতে থাকে। বাকি দুটো জোনের অভিনেতারাও ফ্রিজ ভেঙে মাইম করতে থাকে। ঐ আলো-আঁধারিতে জনৈক অভিনেতা বাইরে থেকে মঞ্চে প্রবেশ করে বুকে ভর দিয়ে সরীসৃপের ন্যয় এবং সে যেন কিছু খুঁজতে থাকে। জোনাল আলো সরে গিয়ে সারা মঞ্চ জুড়ে হাল্কা আলো আঁধারি থাকবে। মঞ্চে আগে থেকে উপস্থিত অভিনেতাদের মধ্যে কেউ কেউ খেয়াল করে যেন কোনো অদ্ভুত জন্তুর আবির্ভাব। তারা একে অপরকে সতর্ক করার পাশাপাশি ভয়ার্ত কলরব সৃষ্টি করে।)পুলিশঃ (চেঁচিয়ে ওঠে) হল্ট। কেউ চিৎকার করবেন না। আমি দেখছি জন্তুটা কি। (জন্তুটা ততক্ষণে মঞ্চের একটা কোনায় এসে কিছু খুঁজতে থাকে। পুলিশ হাতের লাঠিয়ে বাগিয়ে এগিয়ে যায়। মঞ্চ জুড়ে আলো-আঁধারি থাকলেও জন্তু ও পুলিশের জোনে আলোর জোর বাড়ে। পুলিশ ভয়ে ভয়ে বার দুয়েক লাঠির খোঁচা মারে। তাতে জন্তুটি একবার বিরক্তি ভরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পুলিশের দিকে।)পুলিশঃ (মানুষ বুঝতে পেরে খুব জোড়ে হেসে ওঠে) হ্যাঃ হ্যাঃ হ্যাঃনেতাঃ (ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে) কি হলো? ও দারোগা হাসছো কেন?পুলিশঃ স্যর এদিকে আসুন।নেতাঃ না না আমি এখানেই ঠিক আছি। তুমি বল হা-হা-হাসলে কেন?পুলিশঃ (হাসতে হাসতে) স্যর, এ কোনো জন্তু নয়, মানুষ।সবাইঃ (সবাই এগিয়ে আসে ও কোরাসে বলে) অ্যাঁ, মা - নু - ষ! (সারা মঞ্চ আলোকিত হয়)পুলিশঃ এই তো দেখুন না!নেতাঃ অ্যাই, কে তুমি?(মানুষটা কোনো কথা বলে না। কি যেন একটা খালি খুঁজেই চলেছে সারা মঞ্চ জুড়ে। আর বাকি সবাই ওর পিছন পিছন ছোটে। কেউ প্রশ্ন করে, তো কেউ খিল্লি ওড়ায়। আবার ওর দ্রুত চলনে কেউ কেউ উল্টে পরে।)পুলিশঃ ও ভাই, কিছু খুঁজছো?ছেলেঃ দাদা, আপনার কি শরীর খারাপ?মেয়েঃ (ছেলেটাকে) ছেড়ে দাও। বদ্ধ পাগল মনে হয়।দ্বিঃ (মেয়েটাকে) ও দিদি, সত্যি পাগল হলে তো কামড়ে দিতে পারে! (মানুষটা ওদের দিকে তাকায় একবার বিরক্তি আর ঘৃণা নিয়ে)প্রঃ আরে না না পাগল না। নির্ঘাৎ গাঁজা টেনে নিজেকে মাসুদুর রহমান ভাবছে।তৃঃ ও কাকা, পঞ্চার ষাটের খাম একবারে মেরেছো নাকি।দ্বিঃ নাকি চেড়িও মেরেছ?ছেলেঃ তাহলে তো এই পাগলামি অনেক্ষণ চলবে।মেয়েঃ (ছেলেটিকে) প্রচুর অভিজ্ঞতা তো তোমার। (ছেলেটি জিভ্ কাটে)নেতাঃ এই থামো থামো। দারোগা, এক কাজ করো, হয় একে জেলে পোড়ো আর নয় পাগলা গারদে ঢোকাও।পুলিশঃ জেলটাই ভালো হবে স্যর। যদি এর কল্যানে মিডিয়ার চোখে পড়ি! একটা প্রোমোশনও জুটে যেতে পারে!নেতাঃ (চেঁচিয়ে) দারোগা। (পুলিশ জিভ্ কাটে)মানুষঃ তোমরা ভয় পেয়ো না। আমি পাগল নই। আমি গাঁজাড়ীও নই।মেয়েঃ সব পাগলের এক রা।দ্বিঃ ঠিক বলেছো দিদি। সব গাঁজাড়িরো, একই রা (সবাই একসাথে হাসতে থাকে)মানুষঃ (চেঁচিয়ে) প্লিজ্। প্লিজ্, চুপ করো তোমরা। আমি একটা জিনিস খুঁজছি পাচ্ছি না। পেয়ে গেলেই চলে যাব।প্রঃ কি খুঁজছো কাকা?তৃঃ হীরের আংটি?ছেলেঃ নাকি সোনার বিস্কুট?নেতাঃ নাকি কালো টাকা?পুলিশঃ কি বলছেন স্যর? (নেতা জিভ্ কাটে।)মানুষঃ দয়া করে বিরক্ত করো না। আমাকে খুঁজতে দাও। পেলেই চলে যাব।নেতাঃ অনেকক্ষণ ধরে এর ধ্যাষ্টামো সহ্য করছি। দারোগা, অ্যারেস্ট হিম।পুলিশঃ (তৎপর হয়ে) এই তোমরা একটু সাহায্য করো তো। মালটাকে খাড়া করি।মানুষঃ (চিৎকার করে ওঠে) না না না।(মানুষটা খুব করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সবাই মালে ওকে দাঁড় করাতে যায়। পারে না। ও চিৎকার করতে থাকে। এই ধস্তাধস্তিতে ও সজোড়ে পড়ে যায় মঞ্চের মাঝখানে। ব্যাথায় ও অসম্মানে কঁকিয়ে ওঠে মানুষটা। সবাই চেঁচাতে লাগে 'কি হারিয়েছে তোমার/তোর?' মানুষটা দর্শকের দিকে মুখ করে থাকে। একটা জোড়ালো লাল আলো ওর মুখের ওপর পড়ে।)মানুষঃ তোমরা সত্যি জানতে চাও আমার কি হারিয়ছে?সবাইঃ (কোরাসে) হ্যাঁ।মানুষঃ (ব্যথা মিশ্রিত হাসি মুখে) শুনে সহ্য করতে পারবে তো তোমরা?সবাইঃ (কোরাসে) হ্যাঁ হ্যাঁ, বলো, আমরা শুনবো।মানুষঃ (যন্ত্রণায় বিকৃত মুখে চিৎকার করে বলে) আমার মেরুদন্ডখানা।সবাই ভয়ার্ত মুখে দর্শকের দিকে তাকিয়ে থাকে। দুই সেকেন্ড পরে আস্তে আস্তে অনেক মেরুদন্ডহীন মানুষ সরীসৃপের ন্যায় হামাগুড়ি দিতে দিতে মঞ্চে প্রবেশ করে। 'আমার মেরুদন্ড টা কোথায় গেলো?' 'আমারটা!' 'আমারটাও তো খুঁজে পাচ্ছিনা!' 'আরে আমারটাও তো!' 'আমারটাও!' 'আমারটাও!'এরকম কিছু ডায়লগ মঞ্চের মধ্যে ফিসফিসিয়ে চলতে থাকে। আলো এবং ডায়লগের মাত্রা ক্ষীণ হয়ে আস্তে আস্তে যবনিকা পতন হয়।'
-সমাপ্ত-
(মঞ্চ অন্ধকার। হঠাৎ একটা জোনে আলো জ্বলে ওঠে। দেখা যায় একটি ছেলে আর মেয়ে, আলাপ চারিতায় মগ্ন।)
মেয়েঃ পাটায়া। ব্যস্ পাটায়াই ফাইনাল।
ছেলেঃ আরে ডার্লিং, আপাতত দীঘাটা চলো। পরে পাটায়া যাওয়া যাবে।
মেয়েঃ না না না, আমি ওসব জানি না। বিয়ের পর প্রথম হানিমুন নাকি দীঘা! জাস্ট ওয়াক্। ওসব যায়গায় ভদ্রলোকে যায়?
ছেলেঃ আমার ব্যাপার টা তো একটু বোঝার চেষ্টা করো। এই তো মায়ের অপারেশনে এতো খরচ হলো। তারপর বোনের বিয়ে গেলো। পরের মাসে আমাদের বিয়ে। তুমি তো জানোই আমার রোজগার কতটুকু। বাবা চলে যাওয়া থেকে এই পাঁচ বছরে প্রায় নিঃস্ব।
মেয়েঃ বিয়ের করার মুরোদ নেই এদিকে প্রেম করার সখ তো কম নয়। নেহাৎ সবাই জেনে গেছে, ড্যাডির সম্মানটা তো আর নষ্ট হতে দিতে পারি না। আই অ্যাম টোটালি ট্রাপড, নাহলে কবেই..........
ছেলেঃ 'নাহলে কবেই' কি? থামলে কেন? বলো?
মেয়েঃ ছাড়ো! বাদ দাও! আমার আর ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যাবো।
(মেয়েটি বেরতে যায়, ছেলেটা ওর হাতটা ধরে সজল চোখে, কাতর কন্ঠে বলে)
ছেলেঃ আমি তোমায় ভালোবাসি।
মেয়েঃ (ব্যঙ্গ করে) এতো ন্যাকামি মেরো নাতো। ডিসগাস্টিং।
ছেলেঃ অনেক, অনেক স্বপ্ন দেখেছি যে তোমায় নিয়ে। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না আমি।
মেয়েঃ আমায় বিয়ে করতে গেলে, পাটায়া নিয়ে যেতেই হবে। বলো পারবে?
ছেলেঃ ঠিক আছে তাই হবে। যেখান থেকে পারি আমি টাকা জোগাড় করবো। তবু তুমি আমায় ছেড়ে যেও না।
(আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। ওরা ফ্রিজ হয় এবং মঞ্চের অন্য একটি জোন আলোকিত হয়। দেখা যায় রাজনৈতিক দলের জনৈক নেতা অপেক্ষারত আর জনৈক পুলিশের প্রবেশ।)
পুলিশঃ (দু হাত জোড় করে, বিগলিতভাবে) হেঃ হেঃ হেঃ স্যর, আপনি আমাকে ডেকেছেন স্যর?
নেতাঃ হ্যাঁ, তা কেমন আছ দারোগাবাবু(শ্লেষ ভরে)?
পুলিশঃ আজ্ঞে স্যর, আপনি আমাদের ভগবান। আপনার দয়ায় খেয়ে পরে স্বর্গসুখে আছি স্যর।
নেতাঃ কিন্তু, আমার 'স্বর্গসুখটা' তোমার কোন বাড়া ভাতে ছাই ঢাললো দারোগা?
পুলিশঃ আজ্ঞে, মানেটা ঠিক বুঝলাম না স্যর?
নেতাঃ তোমার মেয়ে তো একটা দৈনিক পত্রিকায় চাকরি করে। রিসেন্টলি প্রমোশনও পেয়েছে শুনলাম।
পুলিশঃ হেঃ হেঃ হেঃ আজ্ঞে স্যর, (নেতা কে দেখিয়ে) সবই তো ভগবানের আশীর্বাদ।
নেতাঃ (ঝাঁঝিয়ে) এত ভগবান ভগবান করো না তো। (পুলিশ জিভ কাটে) বাপ্ শালা ভগবান মারাচ্ছে আর মেয়ে পেছনে হুড়কো গুঁজছে।
পুলিশঃ কেন স্যর ও কি করেছে?
নেতাঃ (পুলিশের কলার চেপে ধরে) কেন ন্যাকামি মারাচ্ছো দারোগা? পটলার নাম আজকের পত্রিকার ফ্রন্ট পেজে এলো কি করে? (কলার ছেড়ে দিয়ে) হ্যাঁ পটলার সুরসুরি একটু বেশি, একটু আধটু মাগিবাজিও করে ঠিকই। তাই বলে ফ্রন্ট পেজে?
পুলিশঃ (চমকে গিয়ে) বুঝতে পেরেছি, পটলা আর ঐ বেবুশ্যে মাগিটার কেসটা তো? ঐ খবরটা ও কভার করেছে!
নেতাঃ (রেগে গিয়ে) না তো কি আমি ইয়ারকি মারছি? খবরের শুরুতেই রিপোর্টারের নামটা দেখে চমকে উঠেছিলাম। বেশ্যাও নাকি আবার ধর্ষিতা! শালা তোমরা আমারই খাবে, আমারই পড়বে, আবার আমারই পোঁদে বাঁশ দেবে?
পুলিশঃ না স্যর। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি বাড়ি যাই, আজ ওর একদিন কি আমার একদিন!
নেতাঃ হ্যাঁ, সেই ভালো। আর তাতেও যদি কাজ না হয় দারোগা তো, তোমার মেয়েকে বলে দিও,পটলা কিন্তু এবার সুরসুরিটা ওকেই দেবে(ক্রুর হাসি)।
পুলিশঃ হেঃ হেঃ হেঃ তা আর বলতে!
(আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। নেতা ও পুলিশ ফ্রিজ হয়। এবার মঞ্চের আরেকটি জোন আলোকিত হয়। দেখা যায় তিন কলেজ পড়ুয়া। প্রথম জন ও তৃতীয় জন ছেলে আর দ্বিতীয় জন মেয়ে।)
প্রঃ বাই দ্য ওয়ে, কি খাওয়াচ্ছিস্ আগে না জেনে কিন্তু খবরটা দিতে পারবো না।
দ্বিঃ এত ফুটেজ খাচ্ছিস কেন? আগে খবর টা তো বল?
তৃঃ সত্যি মাইরি, তখন থেকে কি এতো ধানাই-পানাই করছিস! বলবি তো বল, নইলে চললাম।
প্রঃ তৃতীয়র থুতনি ধরে এত তাড়া কিসের খোকা? রুমকি ওয়েট করছে বুঝি?
তৃঃ ধোর শালা, তোরা মারা, আমি চললাম।
প্রঃ (তৃতীয়ের হাতটা ধরে আটকায়) দাঁড়া দাঁড়া বলছি। কাল তো আমাদের পরীক্ষা?
দ্বিঃ হ্যাঁ, তো?
প্রঃ ইকোনমিক্স।
তৃঃ হ্যাঁ, তো তাতে কি?
প্রঃ আচ্ছা তোদের প্রিপেরাসন কেমন?
দ্বিঃ তুই এটা বলার জন্য ডেকেছিস?
প্রঃ আরে না না। আগে উত্তরটা দে বলছি।
তৃঃ আমি গ্যারান্টি দিয়ে ফেল মারবো।
প্রঃ সে অত রুমকি রুমকি করলে, ফেলটাই স্বাভাবিক।
দ্বিঃ নারে, আমিও এবার নির্ঘাৎ ফেল করবো।
প্রঃ সারাদিন অত প্রেমিকদের পকেট কেটে ঘুরে বেড়ালে ঐ হবে।
তৃঃ (প্রথমকে) এমন ভাব করছিস যেন তুই এবার ফার্স্টক্লাস মারবি?
প্রঃ না না ব্যাপারটা তা না। ফেল তো অবধারিত করবো। আর এবার ফেল মারলে বাপি ঘর থেকে বার করে দেবে। তাই এবার এই ব্যবস্থা। (বলেই মোবাইল ফোন বার করে ছবি দেখায়। বাকি দুই বন্ধু ঝুঁকে পরে দেখে এবং খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে।)
দ্বিঃ জিও মামা।
তৃঃ পাগল করে দে মা, লুটে পুটে খাই। আমার তরফ থেকে ট্রিপল এক্স রাম। (হাতের ইশারায় 750এম এল বোঝায়)
দ্বিঃ আর আমার তরফ থেকে এক ছিলিম বাবার প্রসাদ। কিন্তু কোয়েশ্চন পেপারের ছবি পেলি কোথায়?
তৃঃ হ্যাঁ হ্যাঁ পেলি কোথায় বল?
প্রঃ আম খাও না বাল। তোমাদের আঁটি গুনে লাভ আছে।
দ্বিঃ এবার তাহলে ইকোনমিক্সটায় অ্যাট লিস্ট কেউ আটকাতে পারছে না!
প্র ও দ্বিঃ (কোরাসে) একদম একদম।
(আলো ক্ষীণ হয়ে আসে। তবে এরা ফ্রিজ না হয়ে মাইম করতে থাকে। বাকি দুটো জোনের অভিনেতারাও ফ্রিজ ভেঙে মাইম করতে থাকে। ঐ আলো-আঁধারিতে জনৈক অভিনেতা বাইরে থেকে মঞ্চে প্রবেশ করে বুকে ভর দিয়ে সরীসৃপের ন্যয় এবং সে যেন কিছু খুঁজতে থাকে। জোনাল আলো সরে গিয়ে সারা মঞ্চ জুড়ে হাল্কা আলো আঁধারি থাকবে। মঞ্চে আগে থেকে উপস্থিত অভিনেতাদের মধ্যে কেউ কেউ খেয়াল করে যেন কোনো অদ্ভুত জন্তুর আবির্ভাব। তারা একে অপরকে সতর্ক করার পাশাপাশি ভয়ার্ত কলরব সৃষ্টি করে।)
পুলিশঃ (চেঁচিয়ে ওঠে) হল্ট। কেউ চিৎকার করবেন না। আমি দেখছি জন্তুটা কি। (জন্তুটা ততক্ষণে মঞ্চের একটা কোনায় এসে কিছু খুঁজতে থাকে। পুলিশ হাতের লাঠিয়ে বাগিয়ে এগিয়ে যায়। মঞ্চ জুড়ে আলো-আঁধারি থাকলেও জন্তু ও পুলিশের জোনে আলোর জোর বাড়ে। পুলিশ ভয়ে ভয়ে বার দুয়েক লাঠির খোঁচা মারে। তাতে জন্তুটি একবার বিরক্তি ভরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পুলিশের দিকে।)
পুলিশঃ (মানুষ বুঝতে পেরে খুব জোড়ে হেসে ওঠে) হ্যাঃ হ্যাঃ হ্যাঃ
নেতাঃ (ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে) কি হলো? ও দারোগা হাসছো কেন?
পুলিশঃ স্যর এদিকে আসুন।
নেতাঃ না না আমি এখানেই ঠিক আছি। তুমি বল হা-হা-হাসলে কেন?
পুলিশঃ (হাসতে হাসতে) স্যর, এ কোনো জন্তু নয়, মানুষ।
সবাইঃ (সবাই এগিয়ে আসে ও কোরাসে বলে) অ্যাঁ, মা - নু - ষ! (সারা মঞ্চ আলোকিত হয়)
পুলিশঃ এই তো দেখুন না!
নেতাঃ অ্যাই, কে তুমি?
(মানুষটা কোনো কথা বলে না। কি যেন একটা খালি খুঁজেই চলেছে সারা মঞ্চ জুড়ে। আর বাকি সবাই ওর পিছন পিছন ছোটে। কেউ প্রশ্ন করে, তো কেউ খিল্লি ওড়ায়। আবার ওর দ্রুত চলনে কেউ কেউ উল্টে পরে।)
পুলিশঃ ও ভাই, কিছু খুঁজছো?
ছেলেঃ দাদা, আপনার কি শরীর খারাপ?
মেয়েঃ (ছেলেটাকে) ছেড়ে দাও। বদ্ধ পাগল মনে হয়।
দ্বিঃ (মেয়েটাকে) ও দিদি, সত্যি পাগল হলে তো কামড়ে দিতে পারে! (মানুষটা ওদের দিকে তাকায় একবার বিরক্তি আর ঘৃণা নিয়ে)
প্রঃ আরে না না পাগল না। নির্ঘাৎ গাঁজা টেনে নিজেকে মাসুদুর রহমান ভাবছে।
তৃঃ ও কাকা, পঞ্চার ষাটের খাম একবারে মেরেছো নাকি।
দ্বিঃ নাকি চেড়িও মেরেছ?
ছেলেঃ তাহলে তো এই পাগলামি অনেক্ষণ চলবে।
মেয়েঃ (ছেলেটিকে) প্রচুর অভিজ্ঞতা তো তোমার। (ছেলেটি জিভ্ কাটে)
নেতাঃ এই থামো থামো। দারোগা, এক কাজ করো, হয় একে জেলে পোড়ো আর নয় পাগলা গারদে ঢোকাও।
পুলিশঃ জেলটাই ভালো হবে স্যর। যদি এর কল্যানে মিডিয়ার চোখে পড়ি! একটা প্রোমোশনও জুটে যেতে পারে!
নেতাঃ (চেঁচিয়ে) দারোগা। (পুলিশ জিভ্ কাটে)
মানুষঃ তোমরা ভয় পেয়ো না। আমি পাগল নই। আমি গাঁজাড়ীও নই।
মেয়েঃ সব পাগলের এক রা।
দ্বিঃ ঠিক বলেছো দিদি। সব গাঁজাড়িরো, একই রা (সবাই একসাথে হাসতে থাকে)
মানুষঃ (চেঁচিয়ে) প্লিজ্। প্লিজ্, চুপ করো তোমরা। আমি একটা জিনিস খুঁজছি পাচ্ছি না। পেয়ে গেলেই চলে যাব।
প্রঃ কি খুঁজছো কাকা?
তৃঃ হীরের আংটি?
ছেলেঃ নাকি সোনার বিস্কুট?
নেতাঃ নাকি কালো টাকা?
পুলিশঃ কি বলছেন স্যর? (নেতা জিভ্ কাটে।)
মানুষঃ দয়া করে বিরক্ত করো না। আমাকে খুঁজতে দাও। পেলেই চলে যাব।
নেতাঃ অনেকক্ষণ ধরে এর ধ্যাষ্টামো সহ্য করছি। দারোগা, অ্যারেস্ট হিম।
পুলিশঃ (তৎপর হয়ে) এই তোমরা একটু সাহায্য করো তো। মালটাকে খাড়া করি।
মানুষঃ (চিৎকার করে ওঠে) না না না।
(মানুষটা খুব করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সবাই মালে ওকে দাঁড় করাতে যায়। পারে না। ও চিৎকার করতে থাকে। এই ধস্তাধস্তিতে ও সজোড়ে পড়ে যায় মঞ্চের মাঝখানে। ব্যাথায় ও অসম্মানে কঁকিয়ে ওঠে মানুষটা। সবাই চেঁচাতে লাগে 'কি হারিয়েছে তোমার/তোর?' মানুষটা দর্শকের দিকে মুখ করে থাকে। একটা জোড়ালো লাল আলো ওর মুখের ওপর পড়ে।)
মানুষঃ তোমরা সত্যি জানতে চাও আমার কি হারিয়ছে?
সবাইঃ (কোরাসে) হ্যাঁ।
মানুষঃ (ব্যথা মিশ্রিত হাসি মুখে) শুনে সহ্য করতে পারবে তো তোমরা?
সবাইঃ (কোরাসে) হ্যাঁ হ্যাঁ, বলো, আমরা শুনবো।
মানুষঃ (যন্ত্রণায় বিকৃত মুখে চিৎকার করে বলে) আমার মেরুদন্ডখানা।
সবাই ভয়ার্ত মুখে দর্শকের দিকে তাকিয়ে থাকে। দুই সেকেন্ড পরে আস্তে আস্তে অনেক মেরুদন্ডহীন মানুষ সরীসৃপের ন্যায় হামাগুড়ি দিতে দিতে মঞ্চে প্রবেশ করে। 'আমার মেরুদন্ড টা কোথায় গেলো?' 'আমারটা!' 'আমারটাও তো খুঁজে পাচ্ছিনা!' 'আরে আমারটাও তো!' 'আমারটাও!' 'আমারটাও!'এরকম কিছু ডায়লগ মঞ্চের মধ্যে ফিসফিসিয়ে চলতে থাকে। আলো এবং ডায়লগের মাত্রা ক্ষীণ হয়ে আস্তে আস্তে যবনিকা পতন হয়।'
-সমাপ্ত-
0 Comments
Post a Comment