অভিজ্ঞান চক্রবর্তী, বর্তমান ছাত্র

বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমূখ কৃতি শিক্ষকের অভাব তো আমাদের দেশে নেই। তা সত্ত্বেও এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয় কেন? আমার মনে হয়, ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে শ্বপথ নেন, তখন তাঁর কিছু কৃতি ছাত্র তাঁর জন্মদিনটি পালনের বিশেষ উদ্যোগ নেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়ে বলেন, তিনি খুশি হবেন যদি তাঁর জন্মদিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়, কারন তিনি ছিলেন একজন আদ্যন্ত শিক্ষক।
আমার মনে হয় একজন প্রকৃত শিক্ষক হলেন একরাশ অন্ধকারের মধ্যে জ্বলন্ত মোমবাতির সমান। তিনি একাধারে অন্ধকার দূরীভূত করেন এবং নিজেকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করেন। এইরকম বহু শিক্ষক আজও আছেন এবং আমার সামনেই আছেন।
আমরা ক্লাস নাইনে সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর দাম গল্পে পড়েছি একজন ছাত্র যখন প্রকৃত মানবতার ধর্মে দিক্ষীত হন, তখন তাঁর কাছে শিক্ষক হয়ে দাঁড়ান ক্ষমার অপার সমুদ্র।
সেটা ১৯৮৪ সাল। বাবার কোচিনের বন্ধুরা ঠিক করল সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাবেন। বাবাদের স্কুল ছাড়াও এই স্কুলে এবং মতিঝিল কলেজে বাবার দু একজন বন্ধু ছিল।
তখন ফার্স্ট পিরিওড চলছে। বাবার বন্ধুরা এই স্কুলের বন্ধুদের ডাকতে এসেছিল। তৎকালীন হেডমাস্টার মহেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে বেত হাতে দোতলার বারান্দায় পায়চারি করছেন। তাঁকে দেখেই বাবার বন্ধুরা দে ছুট। তাঁরা আজ সবাই প্রতিষ্ঠিত। কেউ ডাক্তার, কেউ বৈজ্ঞানিক, কেউ অধ্যাপক, কেউ কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পদে কর্মরত। কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর সবাই শেষ দিন পর্যন্ত প্রাক্তন হেডমাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এই ছিল বাবাদের সময়ে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক। তখন প্রতিটা দিনই ছিল শিক্ষক দিবস।
কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ছেলে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট টিউশন নেয় (প্রায় ৭৪%)। অথচ সর্বভারতীয় পরীক্ষাতে পশ্চিমবঙ্গ বাসীর সংখ্যা প্রায় হাতে গোনা। আমি আশাবাদী। কারন যাই হোক একদিন এই অবস্থা বদলাবেই। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর 'অব্যক্ত' প্রবন্ধ গ্রন্থে এক যায়গায় পড়েছিলাম '' নিশির অন্ধকার যখন সর্বাপেক্ষা ঘোরতম, তখন হইতেই প্রভাতের সূচনা। আঁধারের আবরণ ভাঙ্গিলেই আলো ''।
যতদিন না সেই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততদিন ছাত্র দরদী শিক্ষকদের ভালো ছাত্রদের খোঁজে হাহুতাশ চলবেই। আমরা সেদিন হয়ত আর ছাত্র থাকব না, কর্মজগতে প্রবেশ করব, আজকের এই দিনটার কথা স্মৃতির মণিকোঠায় অক্ষয় হয়ে থাকবে।
5 Comments
Abhigyan your writing is good.
ReplyDeleteখুব সুখপাঠ্য এবং মনোগ্রাহী প্রবন্ধ, আরও এমন লিখতে থেকো অভিজ্ঞান, ভালো মানুষ হও
ReplyDeleteখুবই সুন্দর উপস্থাপনা
ReplyDeleteএগিয়ে যা ভাই❣️
খুব সময়োপযোগী লেখা। ভালো লাগলো। অনেক শুভেচ্ছা রইল।
ReplyDeleteঅসাধারণ
ReplyDeletePost a Comment