১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে যে তীর্থে সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলাম, ১৯৮৩ সালে সেই কৃষ্ণকুমার হিন্দু একাডেমির সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হয়েছিল মহা সমারোহে।
তারপর ২০০৮ সালের ৩রা জানুয়ারি তারিখে বিদ্যালয়ের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস ততোধিক সমারোহে পালিত হয়েছিল; আমরা কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকও প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলাম।
এবার ৩/১/২০২২ তারিখে বিদ্যালয়ের নবতিতম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের এক অভিনব ব্যবস্থা হচ্ছে- এই সংবাদদাতা, শ্রীমান অরিজিৎ সরকারের দাবি পূরণ করতেই কলম ধরতে হয়েছে।
কিন্তু, 'তলে তলে কেডা?' কেডা আবার? আমার সেইসব 'বাবুমশাইরা'- যারা আজ ছড়িয়ে রয়েছে দেশে ও বিদেশে/ যাদের একত্র পাই স্মৃতির আশ্লেষে।
হ্যাঁ, শুধু অভিনব নয়, অতিমারির এই আবহে অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী এই ই-ম্যাগাজিন। আসলে, ভালো কাজ অনেক হচ্ছে; সেগুলোর সাথে যুক্ত হতে পারলে তবেই কাজ এগোয়, নৈরাশ্য দূর হয়।
এই যেমন, কিছুদিন আগে, রাস্তার ধারে কয়েকটি বিশেষ জায়গায় পোস্টারে লেখা ছিল: 'রসগুল্লা নয়, রসগোল্লা- খেতেও ভালো, শুনতেও'। পরবর্তীকালে এরকম চমৎকার আরও কয়েকটি বাক্যবন্ধ চোখে পড়েছিল, আর প্রতিবারই মুগ্ধ হয়ে অস্ফুটে বলেছিলাম- বা:। ভাষাদূষণ রোধের এই প্রয়াস যে সংস্থার তার নামটি কি জপুর জয়শ্রী? এমন সাধু ও শিল্পমণ্ডিত কাজ থেমে যায় কেন?
মূল বিষয় থেকে কি একটু বেশি সরে গেলাম? স্কুলে ফিরে আসি। রুশ কল্পবিজ্ঞানী আইজাক অসিমভের একটি ছোট গল্প নবম শ্রেণীতে পাঠ্য ছিল- 'দ্য ফান দে হ্যাড।' আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে গল্পটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। খুব সংক্ষেপে বললে গল্পটা এই রকম: ছোট্ট মার্গি স্কুল একদম পছন্দ করেনা, কারন স্কুল মানে তার শোয়ার ঘরের পাশের ছোট্ট ঘরটা। পড়ার উপকরণ হলো একটা যন্ত্র যার ভিতরে আলো জ্বলে উঠলেই পর্দায় ভেসে ওঠে এক যন্ত্রমানবের ছবি। এই ছবিই হলেন শিক্ষক, যিনি যন্ত্রের ভঙ্গিতেই কথা বলেন। পর্দায় যেসব লেখা ফুটে ওঠে তাই পড়তে হয়। আর আছে হোমওয়ার্ক যা যন্ত্রের একটা নির্দিষ্ট খোপে ঢুকিয়ে দিলেই কাজ শেষ।
একদিন মার্গি দেখলো তার দাদা টমি কাগজের উপর ছাপানো কিছু একটা পড়ে চলেছে একমনে। টমিকে জিজ্ঞাসা করে মার্গি জানতে পারলো বহুকাল আগে কাগজের উপর ছাপানো হতো হাজার হাজার বই। সেসব বই নিয়ে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেত। সেখানে মানুষ শিক্ষকের কাছে সবাই একসঙ্গে লেখাপড়া শিখত। খেলাধুলা, হৈ-চৈ আর মজা করে কাটত সারাটা দিন।
অতিমারি এসে সব স্কুল আর শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। অনলাইনের আলো সবার কাছে পৌঁছয় না। খেলা বন্ধ, বন্ধুদের দেখা নেই। আনন্দ নেই, তাই শিক্ষাও নেই।
সেদিন সন্ধ্যায় আমাদের স্কুলের সামনে দিয়ে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল বিষাদের আঁধার মাখা তীর্থক্ষেত্র যেন বলছে, 'এমনটা তো থাকবে না চিরকাল। ছেলেরা আবার একদিন হুটোপুটি করে ফিরে আসবেই। অন্ধকারের অভিজ্ঞতা আলোর আকাঙ্খাকে তীব্রতর করে তুলবে, আর আলো ফুটে উঠতে বাধ্য হবে।'
ঠিকই তো! এখনও আত্মপরিচয় দিতে হলে পিতৃনাম উচ্চারণের পরই বলতে হয় প্রাক্তন শিক্ষক; দমদম কৃষ্ণকুমার হিন্দু একাডেমির তীর্থে এলে এখনও যেন শুনতে পাই: 'কেমন আছেন, স্যার?'
8 Comments
অপূর্ব লেখা। প্রণাম নেবেন স্যার। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
ReplyDeleteDarun lekha. Bhalo thakben sir. Pronam neben amar.
ReplyDeleteঅনবদ্য লেখা একজন ইংরেজির শিক্ষকের তরফ থেকে। অতীত আর বর্তমানের দারুণ মেল বন্ধন ঘটিয়েছেন স্যার। ভালো থাকবেন।
ReplyDeleteস্যার, আপনার কাছে যাদের পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে তাদের মধ্যে আমিও একজন, আপনার গম্ভীর ব্যাক্তিত্ব ভীষণ প্রভাবিত করতো আমায়। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে। আজ নতুন করে জানলাম আপনাকে। ভালো থাকবেন স্যার।
ReplyDeleteপ্রণাম নেবেন স্যার, সেই class 5c থেকে class 12 english টা আপনার এবং পান্ডে বাবুর হাত ধরেই শিখে উঠেছিলাম। স্কুলের প্রতিটা মুহূর্তই এখনও মনে রয়ে গেছে এবং এখনও cherish করি সুযোগ হলেই।
ReplyDeleteএই প্রতিকূলতার মধ্যে এইটুকুই আশা রাখি সবকিছুই যেনো ফের আগের মতন হয়ে উঠুক। আমাদের কাছে স্কুলটা আপনাদের মতন কিছু মানুষের জন্যই এখনও একটা emotion এর জায়গা শুধু পাঠস্থানের থেকেও অনেক বেশি।
ভালো থাকবেন sir, প্রণাম নেবেন।
👏
ReplyDeleteDarun lekha sir. Khub bhalo laglo pore.
ReplyDeleteDarun lekha sir. Khub bhalo laglo pore. Pronam neben.
ReplyDeletePost a Comment