মানুষের চোখ দেখেই নাকি তার চরিত্রের কিছু আভাস পাওয়া যায়। চরিত্র বিশ্লেষণ যারা করতে পারেন সেই সব মনোবিজ্ঞানীরা হয়তো অনেক কথাই বলতে পারবেন এই বিষয়টি সম্পর্কে। কিন্তু চোখের ভাষা বা নীরব মুখের ভাষা দেখে সত্যিই কি মানুষ চেনা যায়? এখন কৃত্রিম মুখোশের আড়ালে অনেকের চোখের ভাষাও যেন লুকিয়ে থাকে। এত গেল মানুষের কথা। আমার অনেকগুলি সারমেয়দের সঙ্গে নিত্য সম্পর্ক। তারা আদর যত্নে ঘরের নিরাপদ ঘেরাটোপে থাকা পে ডিগ্রি কুকুর নয়। নিতান্তই রাস্তায় ঘুরে -ফিরে বেড়ানো বেশ কয়েকটি কুকুর। অনেক সামাজিক বাধাবিপত্তি কাটিয়ে তাদের খাওয়া -দাওয়া , অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, এমনকি অযাচিত বংশ বৃদ্ধি রুখতে জন্ম নিরোধক নানা ব্যবস্থাও করতে হয়। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত না হয়েও চোখের নীরব ভাষায় ওরাও অনেক কথা বলে। সেকথা বুঝতে যারা পারার তারা পারেন। তবে কিছু মানুষ ওদের পছন্দ করেন না।

শান্ত শিষ্ট, আদরের তিন্নির তিনটে বাচ্চা হয়েছিল। একটিকেই বাঁচানো সম্ভব হয়। বাচ্চা বিন্নি একটি মেয়ে কুকুর, প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর। ওর মা এবং অন্য কুকুরদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। খাবার খেতে ডাকলে সবার আগে এসে অদ্ভুত এক হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে পড়ে। চোখের ভাষায় কথা যেন বলতে চায়। কিন্তু বিন্নি একদিন খেতে এলনা । দেখলাম পাড়ার পুকুর ঘাটে শুয়ে আছে। কোনও নৃশংস মানুষ অকারনেই গায়ে বাথরুমে ব্যবহার করা অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছে। সেটা স্বভাবগত ভাবেই পরিস্কার করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। মা এবং মেয়ে দুজনেই কাতর চোখের ভাষায় বোঝাতে চায় কিছু করো। শেষ অবধি চেষ্টা করলাম হসপিটালে নিয়ে গিয়ে বাঁচাতে। একরাত বেঁচে ছিল। মৃত্যুর আগে শেষবার তার চোখে যে নীরব অভিব্যক্তি দেখেছিলাম সেটা ভোলার নয়। হয়তো চোখের ভাষায় কিছু বোঝাতে চেয়েছিল। পৌরসভার লোক এসে ওর মৃতদেহ নিয়ে গেল। ওর মা তিন্নি যেন চোখের নীরব ভাষায় অশ্রুসিক্ত চোখে আমায় বলতে চাইল, পারলে না ওকে বাঁচাতে ? আমার দু চোখের পাতা দুটো কখন ভারী হয়ে উঠেছিল বুঝিনি।
মানস কুমার সেনগুপ্ত
প্রাক্তনী, উচ্চ মাধ্যমিক ১৯৭১
2 Comments
সুন্দর ছবিসহ লেখাটি প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ। তোমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা সার্থক হয়ে উঠুক এই কামনা রইল। শুভেচ্ছা সহ।- মানস কুমার সেনগুপ্ত
ReplyDeleteখুব সুন্দর 🙏
ReplyDeletePost a Comment